Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মুক্তিযুদ্ধে আশুগঞ্জ

 

মুক্তিযুদ্ধ ও আশুগঞ্জ

 

১৯৭১  সনের মুক্তিযুদ্ধে আশুগঞ্জের একটি অনন্য সাধারন গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।নদীপথে সিলেটের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভৈরব-আশুগঞ্জ যৌগিক সামরিক কলাকৌশল এবং যুদ্ধ পরিকল্পনার দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বাঙ্গালীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্দীপ্ত আশুগঞ্জবাসী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আশুগঞ্জের মুক্তিকামী জনতার প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৩ এপ্রিল সকালে একটি পাক-নৌবহর লালপুরে অবস্থান নেয়। লেঃ হেলাল মোর্শেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সুসজ্জিত দল তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করে। ১৪ এপ্রিল ভোর সাড়ে পাঁচটা হতে পাক বাহিনী মেঘনার পশ্চিম পাড় হতে দূর পাল­ার কামান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর গোলাবর্ষণ করে। সকাল সাড়ে ছয়টায় ছ’টি স্যাবর এফ-৮৬ জঙ্গি বিমান আশুগঞ্জ ও লালপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর প্রচন্ড গোলাবর্ষণ করে। একই সাথে এক ঝাঁক পাক হেলিকপ্টার  হতে সোহাগপুরের বাহাদুরপুর ও সোনারামপুরের ধান ক্ষেতে অনেক ছত্রীসেনা অবতরণ করে। তারা এক ভয়ংকর ধ্বংসলীলায় মত্ত হয়ে  ওঠে। ক্যাপ্টেন নাসিম, ক্যাপ্টেন মতিন ও লেঃ হেলাল মোর্শেদের  সাহসী নেতৃত্বে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসে পাকিস্তানীদের আক্রমন প্রতিহত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। কিন্তু পাক হানাদার বাহিনীর সমন্বিত জল-স্থল ও বিমান হামলার মুখে এক সময় তাঁদের প্রতিরোধ চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ফলে কৌশলগত কারণে তারা ঐদিনই তাঁরা পিছু হটে সীমান্তবর্তী এলাকা তেলিয়াপাড়ায় অবস্থান নেয়। আশুগঞ্জে এ অসমযুদ্ধে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও আহত হন। তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে ছিলেন মোঃ আবুল হোসেন পিতামৃত-এলাহীবক্স সাং-সোনারামপুর ও মোঃ শাহজাহান পিতামৃত-মোঃ ইউনুছ সাং-চরচারতলা, আশুগঞ্জ। যুদ্ধের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর আশুগঞ্জে শত্রুর মুখোমুখি হয়। মিত্রবাহিনী প্রথম ৯ ডিসেম্বর আক্রমন করে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আশুগঞ্জের এই লড়াইটি ছিল প্রচন্ড ও ভয়াবহ। এই যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঐদিনকার যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ৪টি ট্যাঙ্ক এবং ৬০/৭০ জন সৈন্য নিহত হয়। আর শত্রুপক্ষের প্রায় দেড় শতাধিক লোক প্রাণ হারায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত আক্রমনে পাক-বাহিনীর অবস্থান দূর্বল হয়ে পড়ে এবং যৌথ বাহিনীর সর্বাত্মক আক্রমনে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ শত্রু মুক্ত হয়।